সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মূলভাব (Sirajuddula Natok)

সিরাজউদ্দৌলা নাটক বুঝতে হলে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মূলভাব পড়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রিয় শিক্ষার্থীরা তোমরা যারা এই নাটকের মূলভাব পড়তে চাও ইয়তারা আমাদের এখানে পড়তে পার।

সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মূলভাব

বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে আশ্রয় করেই ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কাহিনী-বৃত্ত অঙ্কিত হয়েছে। আলোচ্য নাটকে রয়েছে ৪টি অঙ্ক ও ১২টি দৃশ্য। এর মধ্যে আটটি দৃশ্যেই সিরাজ স্বয়ং উপস্থিত। নাটকের কাহিনী গতি পেয়েছে সিরাজ এবং অন্যান্য চরিত্রের সংলাপের মধ্য দিয়ে। আলোচ্য নাটকের সূচনা হয়েছে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে বর্ণিত হয়েছে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের যুদ্ধ। ইংরেজদের বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবিধান করতে নবাব সেনাবাহিনী নিয়ে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করেন এবং দাপটের সাথে ইংরেজ বাহিনীকে পরাজিত করে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ দখল করেন। এর মধ্য দিয়ে সমস্ত কলকাতা নগরীতে নবাবের আধিপত্য স্থাপিত হয়। নবাব কলকাতা নগরীর নাম দেন আলিনগর। এবং এর দেওয়ান নিযুক্ত করেন রাজা মানিক চাঁদকে।

সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ১ম অঙ্কের ২য় দৃশ্যের ঘটনা-স্থল কলকাতা থেকে ৪০ মাইল দূরে ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজ। এখানে বর্ণিত হয়েছে পরাজিত ইংরেজদের দুর্দশার চিত্র এবং নিজেদের মধ্যে কলহের চিত্র। তবে এখানেই উমিচাঁদের ষড়যন্ত্রের সংবাদ পাওয়া যায়। ইংরেজ বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য মাদ্রাজ থেকে যে ৬টি জাহাজ আসে তারও সংবাদ পাওয়া যায় এখানেই।

‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ১ম অঙ্কের ৩য় দৃশ্যের ঘটনা-স্থল ঘোসেটি বেগমের আবাস। ঘসেটি বেগম সিরাজকে সিংহাসন থেকে বিতারিত করে শওকত জঙ্গকে ক্ষমতায় বসাতে চান। শওকত জঙ্গ নামেমাত্র নবাব থাকবেন কিন্তু মূল ক্ষমতা থাকবে ঘসেটি বেগমের হাতে। এটাই ঘসেটি বেগমের মূল উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য হাসিল করতে ঘসেটি বেগম ষড়যন্ত্রের হাত মিলিয়েছেন ইংরেজদের সঙ্গে এবং দেশীয় আমাত্য ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। এর হলো : মিরজাফর, উমিচাঁদ, রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায় দুর্লভ প্রমুখ। নবাব সিরাজ রাইসুল জুহালার মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্রের সংবাদ পান এবং ঘসেটি বেগমকে মতিঝিলের মহল থেকে নিয়ে এসে নজর বন্দি করেন নবাবের রাজপ্রাসাদে।

আরও পড়ুন  সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য ১০টি জেনে নিন!

সিরাজউদ্দৌলা নাটকের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা 

সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ২য় অঙ্কে রয়েছে তিনটি দৃশ্য। এগুলোর ঘটনাস্থল যথাক্রমে নবাবের রাজদরবার, মিরজাফরের আবাস এবং মিরজাফর পুত্র মিরনের আবাস। ১ম দৃশ্যে নবাব তার আমাত্য তথা রাজবল্লভ, মিরজাফর, জগৎশেঠ, রায় দুর্লভদের সামনে এক লবণচাষীর মাধ্যমে ইংরেজ অত্যাচারের নমুনা তুলে ধরেন এবং নবাবের বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্রেরও ইঙ্গিত করেন। নবাবের আমাত্যরা ধর্মের নামে এবং সৃষ্টিকর্তার নামে শপথ করে নবাবের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, এরা সবাই ধর্মের নামে এবং সৃষ্টিকর্তার নামে শপথ করেও নবাবের সঙ্গে বেইমানি করে। নাটকের ২য় অঙ্কের ৩য় দৃশ্যে অর্থাৎ মিরনের আবাসে এই বেইমানির চূড়ান্ত রূপ দেখা যায়। এখানে মিরজাফর ও লর্ড ক্লাইভের উপস্থিতিতে দলিল স্বাক্ষর হয়। নবাব পরাজিত হলে কে কী পাবে তার চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তি সম্পাদন অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত ছিল তারা হলো: জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, মিরজাফর, ওয়াটস ও ক্লাইভ। এখানেই বাংলার নবাব এবং বাংলার দুশো বছরের ভাগ্যলিপি চূড়ান্ত হয়ে যায়।

‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ৩য় অঙ্কে রয়েছে ৪টি দৃশ্য। এই ৪টি দৃশ্যের ঘটনাস্থল যথাক্রমে লুৎফুন্নেসার কক্ষ, পলাশির প্রান্তরে নবাবের শিবির, পলাশির যুদ্ধক্ষেত্র ও মুর্শিদাবাদে নবাবের রাজদরবার। ১ম দৃশ্যে ঘসেটি বেগমের উষ্মা ও ষড়যন্ত্র এবং নবাবের ব্যক্তিগত জীবনের পরিচয় পাওয়া যায়। এখানেই ইংরেজদের বিদ্রোহের এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে নবাবের যুদ্ধ ঘোষণার খবর পাওয়া যায়। ২য় দৃশ্যের ঘটনাস্থল পলাশির প্রান্তরে নবাবের শিবির। এখানে নবাবের শক্তি ও সংকটের সংবাদ পাওয়া যায়। নবাব সিরাজ নিশ্চিত হন যে মিরজাফরের নেতৃত্বাধীন বাহিনী ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না। নবাবের আশঙ্কাই শেষপর্যন্ত সত্য হয়। মোহনলাল, মিরমর্দান ও সাঁফ্রে প্রাণ দিয়ে যুদ্ধ করেও পলাশির প্রান্তরে জয়লাভ করতে পারে নি। নবাব দ্রুত মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন। উদ্দেশ্য, নতুন সেনাবাহিনী তৈরি করে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করা। কিন্তু নবাব ব্যর্থ হন এবং রাজদরবার ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

আরও পড়ুন  আসল বাসমতি চালের দাম ২০২৫ বাংলাদেশ

‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ৪র্থ অঙ্কে রয়েছে ২টি দৃশ্য। এগুলোর ঘটনাস্থল হলো: যথাক্রমে মিরজাফরের রাজদরবার ও জাফরাগঞ্জের কয়েদখানা। ১ম দৃশ্যে মিরজাফরের সিংহাসনে অভিষিক্ত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায় এবং এখানে সংবাদ আসে মিরকাশেমের সৈন্যদের হাতে ভগবানগোলায় নবাব সিরাজ বন্দি হয়েছেন। ২য় দৃশ্যে জাফরাগঞ্জের কয়েদখানায় দেখা যায় মিরনের নির্দেশে কৃতঘ্ন মোহাম্মদি বেগ নবাব সিরাজকে হত্যা করছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলার শেষ স্বাধীন নবারের জীবনের ইতি ঘটে এবং বাংলার বিধিলিপিতে দুশো বছরের গোলামি লেখা হয়ে যায়। নবাবের আর্তনাদ এবং মোহাম্মদি বেগের পাশবিক উল্লাসের মধ্য দিয়ে নাটকের সমাপ্তি ঘটে।

Follow Us

Facebook Page: AmarSikkha.com 

Linkedin: AmarSikkha.com

Google News: Amar Sikkha

WhatsApp Channel: Amar Sikkha 

Telegram: t.me/amarsikkha

We will be happy to hear your thoughts

Leave a reply

Amar Sikkha
Logo