আজকের বিষয় সমাজকর্ম কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী। সমাজকর্ম অভিধানের ব্যাখ্যাঅনুযায়ী,”সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান যা মানুষকে মনো-সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার একটি কার্যকর পর্যায়ে উপনীত হতে সাহায্য করে এবং মানুষের কল্যাণকে শক্তিশালীকরণে কার্যকর সামাজিক পরিবর্তন আনয়ন করে। জেন অ্যাডামসকে সমাজকর্মের জনক এবং অ্যানা এল. ডস-কে সমাজকর্ম শিক্ষার জনক বলা হয়।
সমাজকর্ম কাকে বলে?
সমাজকর্ম একটি উচ্চশিক্ষায়তনিক পাঠ্য বিষয় ও চর্চাভিত্তিক পেশা যেখানে ব্যক্তি, পরিবার, সামাজিক দল, সম্প্রদায় ও সামগ্রিকভাবে সমাজের মৌলিক চাহিদাগুলি মেটানোর মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত কল্যাণ বৃদ্ধি করার ব্যাপারটি মূল বিবেচ্য বিষয়।
ডব্লিউ এ ফ্রেড ল্যান্ডারের মতে, ” সমাজকর্ম হল বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও মানবিক সম্পর্ক বিষয়ক এমন এক পেশাদার সেবা কর্ম, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক সন্তুষ্টি এবং স্বাধীনতা লাভে কোন ব্যক্তিকে একক অথবা দলীয় ভাবে সাহায্য করে।”
সমাজকর্ম ৩ প্রকার
১। ব্যাক্তি সমাজকর্ম
২। দল সমাজকর্ম
৩. সমষ্টি সমাজকর্ম
১. ব্যাক্তি সমাজকর্ম:
সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের জন্য পেশাদার সমাজকর্মীগণ যে পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করেন তাকে ব্যক্তি সমাজকর্ম বলা হয়। এইচ এইচ পার্লম্যান এর মতে সামাজিক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে অধিকতর কার্যকর ভাবে সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারে সেজন্য মানবকল্যাণ ধর্মীয় এজেন্সী কর্তৃক প্রদত্ত সহায়তামূলক ব্যবস্থায় ব্যক্তি সমাজকর্ম ।
২. দল সমাজকর্ম:
দলীয় অভিজ্ঞতা প্রয়োগের মাধ্যমে দলের সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য সমাজকর্মীগণ যে পদ্ধতির আশ্রয় নেন তাই হল দল সমাজকর্ম পদ্ধতি।
৩. সমষ্টি সমাজকর্ম:
পেশাদার সমাজকর্মী কর্তৃক একটি সমষ্টির বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত কৌশল বা উপায় হচ্ছে সমষ্টির সমাজকর্ম । সমষ্টি সমাজকর্ম কি তা আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
ক. সমষ্টি সংগঠন: সমাজকর্মের যে প্রক্রিয়া বা কৌশল প্রয়োগ করে সমাজকর্মী কোন সমষ্টির চাহিদা নিরুপন করে এবং সমষ্টি প্রতিনিধিদের সহায়তায় তাদের বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদের সদ্ব্যবহারের প্রচেষ্টা চালান তাদের সমষ্টি সংগঠন বলে
খ. সমষ্টি উন্নয়ন: সমষ্টি উন্নয়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে সমষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ও জনগণ যৌথভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে।
সমাজকর্মের মূল উদ্দেশ্য কী?
সমাজকর্মের প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হলো:
১। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা: অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য – এগুলো মানুষের মৌলিক চাহিদা। সমাজকর্মীরা চেষ্টা করেন, সবাই যেন এই চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে।
২। সামাজিক সমস্যা নিশ্চিত করা: সমাজে যেন কোনো বৈষম্য না থাকে, সবাই যেন সমান সুযোগ পায়, সেটি দেখা সমাজকর্মীদের দায়িত্ব।
৩। দুর্বল ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো: যারা নিজেদের সমস্যা সমাধানে অক্ষম, সমাজকর্মীরা তাদের সাহায্য করেন।
৪। সমস্যা প্রতিরোধ করা: শুধু সমস্যা সমাধান করাই নয়, ভবিষ্যতে যাতে আর সমস্যা না হয়, সেই চেষ্টাও করা হয়।
সমাজকর্ম কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সমাজকর্ম সমাজের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিছু কারণ নিচে দেওয়া হলো:
- বৈষম্য হ্রাস: সমাজকর্মীরা সমাজের দরিদ্র, দুর্বল ও বঞ্চিত মানুষের অধিকারের জন্য কাজ করেন।
- সামাজিক উন্নয়ন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ নির্মাণে সাহায্য করে।
- অপরাধ হ্রাস: অপরাধপ্রবণতা কমাতে সমাজকর্মীরা বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি চালান।
- মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন: মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সমাজকর্মীরা বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করেন।
বাংলাদেশে সমাজকর্মের ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশে সমাজকর্মের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, দারিদ্র্য, এবং সামাজিক বৈষম্যের কারণে সমাজকর্মীদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে, সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো সমাজকর্মীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ তৈরি করছে। এছাড়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সুরক্ষার মতো নতুন ক্ষেত্রগুলোতেও সমাজকর্মীদের কাজের সুযোগ বাড়ছে।
সমাজকর্মের চ্যালেঞ্জ
সমাজকর্ম একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। সমাজকর্মীদের প্রায়শই কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়। সীমিত সম্পদ, সামাজিক কুসংস্কার, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সমাজকর্মের পথে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া, অনেক ক্ষেত্রে সমাজকর্মীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়েও ঝুঁকি থাকে।