মাসি-পিসি গল্পের মূলভাব শিখে সহজেই এর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রথমে এই মূলভাব পড়া উচিত।
স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পিতৃমাতৃহীন এক তরুণীর করুণ জীবনকাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে “মাসি-পিসি” গল্প। আহাদি নামক ওই তরুণীর মাসি ও পিসি দুজনই বিধবা ও নিঃস্ব। তারা তাদের অস্তিত্বরক্ষার পাশাপাশি বিরূপ বিশ্ব থেকে অহোদিকে রক্ষার জন্য যে বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহাসী সংগ্রাম পরিচালনা করে সেটাই গল্পটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
অত্যাচারী স্বামী এবং লালসা-উন্মত্ত জোতদার, দারোগা ও গুন্ডা-বদমাশদের আক্রমণ থেকে আহাদিকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে অসহায় দুই বিধবার দায়িত্বশীল ও মানবিক জীবনযুদ্ধ খুবই প্রশংসনীয়। দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী স্মৃতি, জীবিকা নির্বাহের কঠিন সংগ্রাম, নারী হয়ে নৌকাচালনা ও সবজির ব্যবসায় পরিচালনা প্রভৃতি এ গল্পের বৈচিত্র্যময় দিক।
মাসি-পিসি গল্পের মূলভাব
নির্মম পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক ‘মাসি-পিসি’ গল্পটি। এ গল্পের প্রেক্ষাপট গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় নির্যাতিত নারীর অসহায়ত্ব। সেই অসহায়ত্বের বিরুদ্ধে আবার এমন দুই নারীর প্রতিবাদ-প্রতিরোধকে দেখানো হয়েছে যে, যারা জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েও জীবন সম্পর্কে আশাবাদী এবং অন্য নারীর জীবনকে নিরাপদ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল। আহ্লাদির মাসি-পিসি আহ্লাদির জীবন রক্ষায় নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিল। কারণ আহ্লাদির স্বামী জগু মাদকাসক্ত, সম্পদলোভী। আহ্লাদির বাবা-মা না থাকায় মাসি-পিসিকেই অভিভাবকত্ব করতে হয়েছিল। জগুর নির্যাতনে মর-মর আহ্লাদি বাবার বাড়ি ফিরে এলে মাসি-পিসি-ই সিদ্ধান্ত নেয়, তারা আর আহ্লাদিকে জগুর কাছে পাঠাবে না। জামাই আসলে তারা আদর-যত্ন করবে; কিন্তু মরতে তারা আহ্লাদিকে আর শ্বশুর বাড়ি পাঠাবে না।
সেকালের প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারা সহজ ব্যাপার ছিল না। স্বামীর কাছে না থাকায় আহ্লাদির ওপর কুনজর পড়ে গ্রামের মাতব্বর গোকুলের। গোকুল গ্রামের চৌকিদার কানাইকে রাতের আঁধারে মাসি-পিসিকে ডেকে আনতে পাঠায় মূলত আহ্লাদিকে কৌশলে তুলে আনতে। মাসি-পিসি তা বুঝে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কানাইয়ের দল মাসি-পিসির রণমূর্তি দেখে ভড়কে যায় এবং দলবল নিয়ে পালায়। এ প্রৌঢ়া-বিধবা দুই নারী এ গল্পের মাধ্যমে নারীকে আত্মনির্ভরশীল-সাহসী-আত্মপ্রত্যয়ী হতে অনুপ্রাণিত করেছে। নারীকে মানসিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠতে হবে হারার আগে হেরে না গিয়ে। পুরুষতান্ত্রিকতা যদি নারীর অস্তিত্ব বিনাশের কারণ হয়, তবে তার ভিত্তিমূলে আঘাত হানতে হবে প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে। সম্মানহীন দাসত্বের জীবনে নারীকে বন্দি করার অবসান ঘটুক, নারী-পুরুষের প্রেমময় সহনশীল সম্পর্কে পরিবার-সমাজ-দুনিয়া গড়ে উঠুক- সেটিই গল্পকার এ গল্পের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন।