আমাদের অনেক সময় বিভিন্ন পোকা মাকড় কামরায়। কিছু কিছু পোকা মাকড় বিষাক্ত হয়ে থাকে, বিষাক্ত পোকা কামড়ালে করণীয় কী? এটি জানা আমাদের সকলের জন্য জরুরি। অনেক সময় পোকার বিষের কারণে হার্ট এটাক্ট আসতে পারে তাই, আগে থেকেই সাবধান হওয়া জরুরি। পোকা- মাকড় কামড়ালে যা করবেন এবং কিছু ঘরোয়া ও আধুনিক চিকিৎসা, ব্যথা নিরসনের জন্য করণীয় ও প্রাথমিক চিকিৎসা। বিস্তারিত নিচে থেকে পরে নিন আশাকরি উপকারে আসবে।
বিষাক্ত পোকা কামড়ালে করণীয়
মৌমাছি বা বোলতা
মৌমাছি বা বোলতা, এ ধরনের পোকার হুল শরীরে ফোটালে তা অত্যন্ত কষ্টকর। এ সময় যতটা সম্ভব হাত বা পা যেখানেই হুল ফুটেছে তা স্থিরভাবে রাখতে হবে। যত বেশি হাত-পা নাড়ানো হবে তত দ্রুত এর বিষ ছড়িয়ে যেতে শুরু করবে রক্ত প্রবাহের সঙ্গে।
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এই উপায় শুনতে অদ্ভূত শোনালেও বেশ কার্যকর। আক্রান্ত স্থানে এক মুঠো কাদা লেপে দিতে পারেন, এতে ফোলাভাব কমে আসবে। তাছাড়া বরফ ডলে নিলেও জ্বলুনি ও ফোলাভাব কমবে। মৌ মাছির কামড়- কামড় স্থানে পেঁয়াজের রস, লেবুর রস বা তুলসি পাতার রস ঘষলে জ্বালা যন্ত্রণা সেরে যায়।
মাকড়সার বিষ- শরীরে মাকড়সার বিষ লাগলে দেরী না করে গাওয়া ঘি লাগালে বিষ ছড়াতে পারে না এবং চুলকানি ও জ্বালাবোধ কমে যায়।
বোলতার কামড়ের জ্বলুনি উপশমে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার ওই জায়গায় ছড়িয়ে দিন। এটি ত্বকের জ্বলুনি ভাব কমাতে সাহায্য করবে।
– মৌমাছি হুল ফোটলে যত দ্রুত সম্ভব ওই হুল উঠিয়ে নিতে হবে। এরপর কল ছেড়ে ঠাণ্ডা পানির নিচে ওই স্থানটি ধরে রাখতে হবে। এরপর তুলসীপাতা থেঁতলে আক্রান্ত জায়গায় চেপে ধরলে আরাম পাওয়া যাবে। ইউক্যালিপটাসের তেল পাওয়া গেলে একটি পাতলা কাপড়ে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিতে পারেন।
– বেশিরভাগ পোকার কামড় উপশমে বেশ কার্যকর বেইকিং সোডা ও অ্যাপল সাইডার ভিনিগার। বেইকিং সোডা ও অ্যাপল সাইডার ভিনিগার একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে কামড়ের জায়গায় লাগিয়ে রাখলে আরাম পাওয়া যাবে।
– পোকার কামড় দমনে অ্যালোভেরার জেল খুবই কার্যকর। কামড়ের স্থানে খানিকটা টাটকা অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে নিলেই আরাম পাওয়া যাবে।
আমচুর পানিতে পিষে চন্দনের মত করে প্রলেপ দিলে ঐ বিষ নষ্ট হয়ে যায় ও জ্বালা যন্ত্রণা কমে যায়।
বিষাক্ত পিঁপড়ার কামড়
রসুনের কোয়া থেকে রস বের করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে জ্বালা কমে। তাছাড়া তুলসী পাতার রস বা গোল মরিচের গুঁড়ো ও ভিনিগারের সাথে মিশিয়ে জ্বালা স্থানে লাগালে বিশেষ উপকার হয়।
বিষাক্ত পোকা বা বিছের কামড়– ১ চামচ আলকুশি গরম পানিতে ফুটিয়ে আঠার মত করে লাগালে বা পেঁয়াজের রস লাগালে উপকার হবে।
মৌমাছি, বোলতা বা ভিমরুলের কামড়– লবণ ও তুলসী পাতা বেঁটে লাগালেও জ্বালা ও ব্যাথা সেরে যায়।
ইঁদুর, বেড়াল বা নেউলের কামড়– ক্ষতস্থানে পুদিনা পাতার প্রলেপ দিলে উপকার হবে।
কামড় অনুভব করার সাথে সাথে আপনি যা করতে পারেন –
১) কামড় অনুভব করার সাথেই সাথেই উক্ত পোকা/মৌমাছি/মাকড়সাটিকে সরিয়ে দিন। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত এটি আপনাকে কামড়াবে ততক্ষণই বিষ শরীরে প্রবেশ করতে থাকবে।
২) নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। খুব বেশি নড়াচড়া করবেন না। কারণ নড়াচড়া বেশি করলে বিষ রক্তের মধ্য দিয়ে দ্রুত ছড়িয়ে যাবে।
৩) যদি মৌমাছি আপনাকে হুল ফোটায়, তাহলে মৌমাছি সরিয়ে দেয়ার পরও হুল ভেঙ্গে চামড়ায় রয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব ভাঙ্গা হুলটি চামড়া থেকে সরিয়ে ফেলুন।
৪) যদি আপনি পায়ে অথবা হাতে কামড় খেয়ে থাকেন তাহলে বাহু যত সম্ভব নিচু করে রাখুন। এতে বিষ সহজে ছড়াবে না। কয়েক ঘণ্টা পর যদি হাত ফুলতে শুরু করে, তাহলে হাত উচু করে ফোলা কমাতে পারেন।
৫) তবে কামড় যদি কাঁকড়া বিছের হয়ে থাকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হসপিটালে যান। এখন মোটামুটি সব হাসপাতালেই কাঁকড়া বিছের বিষের এন্টি ডোট পাওয়া যায়। তাই যত দ্রুত যাবেন ক্ষতি ততই কম হবে।ভ
ব্যথা নিরসনের জন্য করণীয় –
১) যাই কামড়াক, সাধারণত সেগুলো যদি বিষাক্ত হয় তাহলে কামড়ের স্থানে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। এই ক্ষেত্রে ক্ষতস্থানে বরফ ব্যবহার করুন। প্রথম ৬ ঘণ্টার প্রতি ঘণ্টায় ১৫/২০ মিনিট করে বরফ ব্যবহার করুন। যেসময় বরফ লাগাচ্ছেন না, সেইসময় একটি পরিষ্কার ভেজা কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরে রাখুন এবং বরফ ব্যবহারের সময় বরফ এবং ক্ষতস্থানের মাঝে একটি পাতলা কাপড় ব্যবহার করা ভালো।
২) ক্ষতস্থানের ফোলা কমানোর জন্য যতটুকু সম্ভব ক্ষতস্থান সমতল থেকে উচুতে রাখার চেষ্টা করুন, এতে বিষ ছড়া্বে না, ফোলাও কম হবে।
৩) প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ক্ষতস্থানের চুলকানি, ফুলে যাওয়া, ব্যথা কমানোর জন্য Benadryl কিংবা ChlorTrimeton ধরনের এন্টিহিস্টামিন ওষুধ খেতে পারেন। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
৪) ব্যথা কমানোর জন্য ফার্মেসি থেকে Benzocaine জাতীয় স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। তবে এলার্জিক রিএকশন এর ব্যাপারে লক্ষ্য রাখবেন।
৫) Hydrocortisone 1% cream অথবা ক্যালামাইন লোশন ক্ষতস্থানে লাগালে লালচে ভাব এবং ফোলা দূর হবে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এধরনের কিছু ব্যবহার করবেন না।
৬) ৬ ঘণ্টা বরফ ব্যবহারে যদি ফোলা কমে যায়, তাহলে আস্তে আস্তে ক্ষতস্থানে গরম কাপড়ের সেঁক দিতে পারেন। এতে ক্ষতস্থানের জীবাণু সংক্রমণ বন্ধ হবে।
পোকার কামড়ের ক্ষেত্রে প্রতিকার হিসেবে আপনি প্রেসক্রিপশন ছাড়াই যেসব ওষুধ খেতে পারেন –
• Acetaminophen; যেমন – Tylenol.
• Ibuprofen; যেমন – Advil অথবা Mortin.
• Naproxen; যেমন – Aleve অথবা Naprosyn.
• Aspirin; যেমন – Bayer অথবা Bufferin.