ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ কাজ হলো নিয়ন্ত্রন। পরিকল্পনার মাধ্যমে শুরু হওয়া ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী নিয়ন্ত্রনের মাদ্ধমে শেষ হয়। নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী কার্যাবলী সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা বিচার বিশ্লেষণ বিচ্যুতি ঘটলে তার কারণ নির্ণয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রন বলে।
নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ গুলো কি কি
নিয়ন্ত্রণ কার্য এক ধাপে বা একবারে সম্পন্ন করা সম্ভব না। নিয়ন্ত্রণ কার্য সম্পন্ন করার জন্য কতকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। নিয়ন্ত্রণের এ ধারাবাহিক কার্যকে নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ বলে। নিয়ন্ত্রণের আদর্শ পদক্ষেপ কয়টি এ নিয়ে ব্যবস্থাপনাবিদদের মধ্যে যথেষ্ট মতানৈক্য রয়েছে। তথাপি অধিকাংশ ব্যবস্থাপনাবিদগণের মতে নিয়ন্ত্রণ পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়ে গঠিত। যথাঃ
১. আদর্শমান নির্ধারণ : নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে প্রতিটি কাজের আদর্শমান নির্ধারণ করা। আদর্শমান বলতে প্রতিষ্ঠানের উৎপন্ন দ্রব্যের পরিমাণ, গুণ, মান, সময়, মূল্য, বিনিয়োগ, আয়, ব্যয় ইত্যাদির ভিত্তিতে মান নির্ধারিত হওয়াকে বুঝায়। এসব আদর্শমানের ওপর ভিত্তি করেই নিয়ন্ত্রণ কার্য সম্পাদিত হয়। তাই আদর্শমানকে নিয়ন্ত্রণের মূলভিত্তি বলা হয়।
২. সম্পাদিত কাজের পরিমাপ : আদর্শমান অনুযায়ী কাজ কতটুকু সম্পাদিত হয়েছে তা নির্ধারণ করাকে সম্পাদিত কাজের পরিমাপ বলে। এটি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দ্বিতীয় ধাপ। বাস্তবে এ পর্যায়ে কতটুকু কার্যসম্পাদিত হয়েছে সেটা পর্যবেক্ষণ বা পরিমাপ করা হয়। সম্পাদিত কাজ পরিমাপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিচুতি নির্ণয় করা সহজ হয়।
৩. আদর্শমানের সাথে সম্পাদিত কাজের তুলনা : যে প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত আদর্শমানের সাথে প্রকৃত কার্যফলের তুলনা করা হয় তাকে আদর্শমানের সাথে সম্পাদিত কাজের তুলনা করা হয়। এটি নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার তৃতীয় পদক্ষেপ। এ তুলনার মাধমে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত আদর্শমান অনুযায়ী কাজে বিচ্যুতি আছে কি না তা নির্ণয় করা হয় এবং বিচ্যুতি থাকলে তার পরিমাণ কতটুকু তা চিহ্নিত করা হয়।
৪. বিচ্যুতির কারণ শনাক্তকরণ ও বিশ্লেষণ : এটি নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার চতুর্থ ধাপ। এ ধাপে আদর্শমানের সাথে প্রকৃত কার্যফলের তুলনা করে যদি কোনো বিচ্যুতি পাওয়া যায় তবে তার কারণ নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বিচ্যুতি কী কর্মচারীদের অদক্ষতার কারণে, না কাঁচামালের ত্রæটি বা নিকৃষ্টতার কারণে, না যন্ত্রপাতির অকার্যকারিতার কারণে, না উন্নত প্রযুক্তির অভাবে, না আর্থিক দুর্বলতার কারণে, না অবাস্তব পরিকল্পনার কারণে হয়েছে তা বিশ্লেষণপূর্বক যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট পেশ করতে হয়।
৫. সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ : এটি নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ। এ পর্যায়ে বিচ্যুতির কারণ নির্ধারণ করার পর ভুলত্রæটি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রয়োজনে পরিকল্পনাকে কার্যকর করতে নতুন করে সাজাতে হয়। যেসব পন্থায় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বরা যায় তা নিচে বর্ণনা করা হলো :
ক. নির্দেশনায় কোনো একটি ভুল থাকলে তা সংশোধন;
খ. কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান;
গ. প্রযুক্তি ও উপকরণাদির যথার্থ ব্যবহার;
ঘ. পরিকল্পনা সংশোধন বা রদবদল;
ঙ. প্রয়োজনে অতিরিক্ত কর্মচারী নিয়োগ;
চ. উপযুক্ত কার্য পরিবেশ সৃষ্টি ইত্যাদি।
পরিশেষে বলা যায়, উপরিউক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটে। যেহেতু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ ধাপ তাই নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপগুলো অবশ্যই যথাযথভাবে পরিচালনা করতে হবে।