কাশির সিরাপ ভালো কোনটা জানুন!

বাজারে প্রায় শত রকমের কাশির সিরাপ পাওয়া যায়, যার মধ্যে আমরা কাশির সিরাপ ভালো কোনটা সেটি জানতে পারি না। আজকের পোস্ট থেকে আপনারা সহজেই জানতে পারবেন বাজারের কোন সিরাপ সবচেয়ে ভালো।

ঠান্ডা, ধুলাবালি, অ্যালার্জি বা সংক্রমণের কারণে কাশি হতে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে কাশির সিরাপ অন্যতম। এটি তরল ওষুধ, যা মূলত গলা নরম করা, শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখা এবং কাশির তীব্রতা কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। চলুন জেনে নেই কোন সিরাপটি কাশির জন্য ভালোঃ

কাশির সিরাপ ভালো কোনটা দেখুন 

বাজারে থাকা কিছু ভালো সিরাপ নিয়ে আজকের পোস্ট সাজানো হলোঃ

১. ডিক্সার প্লাস 

Dixar plus

​ডিক্সার প্লাস সিরাপ একটি তরল ওষুধ, যা সাধারণ সর্দি, এলার্জি বা অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাজনিত লক্ষণগুলি উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। এই সিরাপে তিনটি প্রধান সক্রিয় উপাদান রয়েছে:​

ডেক্সট্রোমেথরফান হাইড্রোব্রোমাইড: শুকনো কাশি কমাতে সহায়তা করে।​

ফেনাইলএফ্রিন: নাক বন্ধভাব দূর করে এবং নাসারন্ধ্রের ফোলা কমায়।​

ট্রাইপ্রোলিডিন: এলার্জিজনিত লক্ষণ যেমন হাঁচি, নাক বা গলা চুলকানি এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া উপশম করে।​

ব্যবহার:

ডিক্সার প্লাস সিরাপ নিম্নলিখিত উপসর্গগুলির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়:​

  1. সামান্য গলা বা ব্রঙ্কিয়াল জ্বালার কারণে সৃষ্ট কাশি​
  2. সর্দি​
  3. হাঁচি​
  4. নাক বা গলা চুলকানি​
  5. চুলকানি, জলযুক্ত চোখ​
  6. নাক বন্ধ​

সেবনবিধি: এই ওষুধটি সেবনের আগে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত মাত্রায় গ্রহণ করা উচিত। সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ এবং শিশুদের জন্য তাদের বয়স ও ওজন অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ করা হয়। খাবারের সাথে বা খাবার ছাড়াও এটি গ্রহণ করা যায়, তবে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সেবন করা উত্তম।

২. তুসকা প্লাস 

তুসকা প্লাস

তুসকা প্লাস সিরাপ একটি মিশ্রণ ওষুধ, যা কাশি ও সংশ্লিষ্ট জমাটবদ্ধতার উপসর্গ উপশমে ব্যবহৃত হয়। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি এই ওষুধটি উৎপাদন করে। ​

আরও পড়ুন  সহজেই থাইরয়েড কমানোর উপায় জানুন!

প্রধান উপাদানসমূহ:

  • গুয়াইফেনেসিন (১০০ মি.গ্রা./৫ মি.লি.): বুকে জমাটবদ্ধ শ্লেষ্মার ঘনত্ব কমিয়ে শ্লেষ্মা বের করতে সহায়তা করে।​
  • লেভোমেন্থল (১.১ মি.গ্রা./৫ মি.লি.): নাক বন্ধভাব দূর করে এবং মৃদু অনুভূতিনাশক কার্যকারিতা প্রদর্শন করে।​
  • ডাইফেনহাইড্রামিন হাইড্রোক্লোরাইড (১৪ মি.গ্রা./৫ মি.লি.): এন্টিহিস্টামিনিক ও কফ দমনকারী বৈশিষ্ট্যযুক্ত, যা এলার্জিজনিত কাশি ও হাঁচি কমাতে সহায়তা করে।​

ব্যবহার:

তুসকা প্লাস সিরাপ কাশি এবং সংশ্লিষ্ট জমাটবদ্ধতার উপসর্গ উপশমে নির্দেশিত। ​

সেবনবিধি:

  • প্রাপ্তবয়স্ক ও ১২ বছরের ঊর্ধ্বে শিশু: প্রতিদিন ৪ বার ২ চা চামচ (১০ মি.লি.) করে সেবন করা উচিত। ২৪ ঘণ্টায় ৮ চা চামচের বেশি সেবন করা যাবে না।​
  • ১২ বছরের নিচের শিশু: এই ওষুধের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠিত নয়; তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ব্যবহার করা উচিত নয়।​

সতর্কতা:

  1. এই সিরাপ সেবনে তন্দ্রাচ্ছন্নতা হতে পারে; তাই গাড়ি চালানো বা বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি পরিচালনা থেকে বিরত থাকা উচিত।​
  2. ন্যারো অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা বা প্রসটেটের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ডাইফেনহাইড্রামিন ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।​
  3. দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা অতিরিক্ত শ্লেষ্মা উৎপন্ন কাশির ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

৩.​ ওকফ সিরাপ

​ওকফ সিরাপ

​ওকফ সিরাপ একটি মিশ্রণ ওষুধ, যা শুকনো কাশি এবং সর্দিজনিত উপসর্গ উপশমে ব্যবহৃত হয়। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এই ওষুধটি উৎপাদন করে। ​

প্রধান উপাদানসমূহ:

  1. ডেক্সট্রোমেথরফান হাইড্রোব্রোমাইড: শুকনো কাশি দমনে কার্যকর।​
  2. ফেনাইলএফ্রিন হাইড্রোক্লোরাইড: নাকের বন্ধভাব কমিয়ে শ্বাস নেওয়া সহজ করে।​
  3. ট্রাইপ্রোলিডিন হাইড্রোক্লোরাইড: এলার্জিজনিত উপসর্গ যেমন হাঁচি, নাক ও গলা চুলকানি উপশম করে।​

ব্যবহার:

ওকফ সিরাপ সাধারণ সর্দি, অ্যালার্জি বা অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাজনিত লক্ষণগুলি উপশমে ব্যবহৃত হয়, যেমন:​

  • শুকনো কাশি​
  • নাক বন্ধ​
  • হাঁচি​
  • নাক ও গলা চুলকানি​
  • চোখ দিয়ে পানি পড়া​

সেবনবিধি:

প্রাপ্তবয়স্ক ও ১২ বছরের ঊর্ধ্বে শিশু: প্রতি ৪ ঘণ্টায় ১ চা চামচ (৫ মি.লি.), তবে ২৪ ঘণ্টায় ৬ চা চামচের বেশি নয়।​

আরও পড়ুন  চোখ উঠলে করণীয় কি? চোখ ওঠার লক্ষণ ও প্রতিকার

৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু: প্রতি ৪ ঘণ্টায় ½ চা চামচ (২.৫ মি.লি.), তবে ২৪ ঘণ্টায় ৩ চা চামচের বেশি নয়।​

২ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশু: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।​

২ বছরের কম বয়সী শিশু: ব্যবহার করা উচিত নয়।

৪. ​এমব্রোক্স সিরাপ

Ambrox

​এমব্রোক্স সিরাপ হল একটি মিউকোলাইটিক ওষুধ, যার সক্রিয় উপাদান অ্যামব্রোক্সল হাইড্রোক্লোরাইড। এটি শ্বাসনালীর শ্লেষ্মা পাতলা করে কাশি সহজ করতে সহায়তা করে।​

ব্যবহার: এমব্রোক্স সিরাপ নিম্নলিখিত শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাগুলির উপশমে ব্যবহৃত হয়:​

  1. শ্লেষ্মাযুক্ত কাশি​
  2. তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস​
  3. ল্যারিঞ্জাইটিস, ফ্যারিঞ্জাইটিস, সাইনুসাইটিস এবং রাইনাইটিসের মতো রাইনোফ্যারিঞ্জিয়াল ট্র্যাক্টের প্রদাহ​
  4. শ্লেষ্মাযুক্ত অ্যাজমাটিক ব্রঙ্কাইটিস ও ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা​
  5. ব্রঙ্কিয়েকটেসিস​
  6. ক্রনিক নিউমোনিয়া​

সেবনবিধি: সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে ২-৩ বার ৩০ মি.গ্রা. অ্যামব্রোক্সল সেবন করা হয়। তবে সঠিক মাত্রা ও সময়সূচি নির্ধারণের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।​

সতর্কতা:

  • গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে অ্যামব্রোক্সল সেবনে সতর্কতা প্রয়োজন। চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া এড়িয়ে চলা উচিত।​
  • যদি লিভার বা কিডনির সমস্যা থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।​

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে:​

  • বমি বমি ভাব​
  • ডায়রিয়া​
  • পেট ব্যথা​
  • এলার্জি প্রতিক্রিয়া​

যদি গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।​

উপসংহার: এমব্রোক্স সিরাপ শ্বাসনালীর শ্লেষ্মা পাতলা করে কাশি উপশমে কার্যকর। তবে সঠিক মাত্রায় ও নির্দেশনা অনুসারে সেবন করা জরুরি। যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

We will be happy to hear your thoughts

Leave a reply

Amar Sikkha
Logo