বাদাম যে একটি উপকারি খাবার এটি আমরা সবাই জানি কিন্তু কাজু বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না, আজকে আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করব এর উপকারিতা এবং কিছু অপকারিতা সম্পর্কে।
বাদাম আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। এতে রয়েছে নানান ধরনের ভিটামিন যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন, আমন্ড বা বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন E পাওয়া যায়, যা ত্বক, চুল ও চোখের জন্য উপকারী এবং একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। চিনাবাদামে থাকে ভিটামিন B3 (নিয়াসিন), যা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া এতে ভিটামিন B1 (থায়ামিন) ও B9 (ফোলেট) থাকে, যা শক্তি উৎপাদন ও নতুন কোষ তৈরিতে সহায়তা করে।
কাজুবাদামে পাওয়া যায় ভিটামিন K, যা রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে, এবং ভিটামিন B6, যা স্নায়ুতন্ত্র ও ব্রেইনের সঠিক কার্যকারিতায় সহায়ক। আখরোটে আছে বিশেষ ধরনের ভিটামিন E (গামা-টোকোফেরল) ও ফোলেট, যা হৃদযন্ত্র এবং কোষ গঠনে উপকার করে। পেস্তা বাদামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন B6, যা হিমোগ্লোবিন তৈরি এবং ইমিউন সিস্টেম উন্নত করতে সাহায্য করে।
কাজু বাদামের উপকারিতা
বাদামে আছে প্রচুর মনো ও পলি অ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাটস, প্রোটিন ও ডায়েটারি ফাইবার যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। প্রধানত ভিটামিন ই, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এবং আরও কিছু মিনারেলস যেমন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন জিংক ও ম্যাঙ্গানিজ, কপার, সেলেনিয়াম আছে বাদামে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
- বাদাম হৃদপিণ্ড ও রক্তের ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়
- হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে সাহায্য করে
- চোখ, ত্বক, হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে
- হজম প্রক্রিয়া মজবুত করে
- মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে, স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। ওজন কমাতে সাহায্য করে
- বিভিন্ন ধরনের ফাংগাল ও ভাইরাল ইনফেকশন প্রতিরোধ করে
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
প্রতিদিন কতটুকু বাদাম খাওয়া যেতে পারে
ডা. তাসরিয়ার রহমান জানান, ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের (এনএলএম) তথ্য অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি দিনে ৩০ গ্রাম বাদাম খেতে পারেন।
কাজু বাদামের অপকারিতা
১. বাদামের অনেক উপকারিতা থাকলেও অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড প্রধানত ওমেগা-৬। ওমেগা -৬ ফ্যাটি এসিড যখন বেশি পরিমাণে থাকে তখন ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বিক্রিয়া করে টক্সিক হয়ে যায়।
২. ওমেগা ৬ অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হলে তা হার্টের রোগ, আর্থাইটিস, ডায়াবেটিস এলার্জি ও অ্যাজমা রোগ সৃষ্টি করে।
৩. অতিরিক্ত ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে প্রবেশের ফলে তা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডকে এন্টি ইনফ্লামেটরি হরমোনে কনভার্ট করে। ফলে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
৪. বাদাম শরীরে অতিরিক্ত ফাইটিক এসিড তৈরি করে। শরীর যেহেতু ফাইটিক এসিড সরাসরি হজম করতে পারে না, তাই হজমে বাধা সৃষ্টি হয়।
৫. যাদের কিডনি ও গলব্লাডারের সমস্যা রয়েছে তাদের কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এতে বিদ্যমান অক্সালেট ক্যালসিয়াম কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে।
৬. অতিরিক্ত ক্যালরিসমৃদ্ধ হওয়ায় বাদাম বেশি পরিমাণে খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
৭. বাদাম যদি লবণ দিয়ে ভেজে খাওয়া হয় তাহলে সেটি ব্লাড প্রেশার বাড়িয়ে দিতে পারে।
বাদামের উপকারিতা FAQ
১. সকালে কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা কি?
উত্তর: কাঁচা বাদাম হাড় শক্তিশারী করে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং এর পাশাপাশি ক্যান্সারের আশঙ্কাও দূর করে। কাঁচা বাদামে থাকে ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিনের মতো নানা উপাদান থাকে। যার ফলে রোজ যদি অল্প করে কাঁচা বাদাম খাওয়া যায়, তা হলে শরীরের কর্মক্ষমতা অনেকটা বেড়ে যায়।
২. খালি পেটে চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা কি?
উত্তর: প্রতিদিন একমুঠো চিনা বাদাম খেতে পারেন শরীরের কোলেস্টেরল কমবে খুব সহজে। ৩. রাতে ১০-১৫ টি বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। চিনা বাদামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস নির্মূলে বিশেষভাবে কার্যকরী।
৩. বাদাম কখন খাওয়া ভালো?
উত্তর: পুষ্টিবিদের পরামর্শ, বাদাম খাওয়া সঠিক সময় হল একেবারে সকালে অথবা প্রাতরাশের পরে। যে কোনও দু’টি মিলের মাঝে বাদাম খেলে উপকার হবে। বিকেলের দিকে খিদে পেলে তখন বাইরের খাবার না খেয়ে, বাদাম বা শুকনো ফল খেলে উপকার পাবেন। তবে রাতে বাদাম না খাওয়াই ভাল