বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর কপালকুণ্ডলা উপন্যাস pdf ডাউনলোড করতে চাইলে নীচে দেওয়া লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিন। এই উপন্যাসটি লেখকের এক অনন্য সৃষ্টি। খুব বেশি সময়ের মধ্যেই এটি অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
কপালকুণ্ডলা (Kapalkundala)’ একটি রোম্যান্টিক উপন্যাস, ভয়াবহ ঘটনা এবং উপ-প্লট সহ। প্লটগুলি খুব দ্রুত অগ্রসর হয়, প্রাকৃতিক পরিণতিতে পৌঁছায়, যদিও অতিপ্রাকৃত পরিস্থিতি এপিসোডগুলিতে মনোমুগ্ধকরনের জন্য ডুবে যায়। উপন্যাসটির উচ্চতর কাব্যিক অনুগ্রহ রয়েছে, এক প্রস্রাব্য কাঠামোয় পিঠে বিদ্রূপের সাথে মিশ্রিত।
কপালকুণ্ডলা উপন্যাস pdf ডাউনলোড
গল্পটির কিছু অংশ নীচে দেওয়া হয়েছে এখান থেকে পড়ে যদি ভালো লাগে তাহলে পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে নিন।
প্রায় দুই শত পঞ্চাশ বৎসর পূর্ব্বে এক দিন মাঘ মাসের রাত্রিশেষে একখানি যাত্রীর নৌকা গঙ্গাসাগর হইতে প্রত্যাগমন করিতেছিল। পর্তুগিস্ ও অন্যান্য নাবিকদস্যুদিগের ভয়ে যাত্রীর নৌকা দলবদ্ধ হইয়া যাতায়াত করাই তৎকালের প্রথা ছিল; কিন্তু এই নৌকাবিহারীরা সঙ্গিহীন। তাহার কারণ এই যে, রাত্রিশেষে ঘোরতর কুস্মটিকা দিগন্ত ব্যাপ্ত করিয়া ছিল; নাবিকেরা দিনিরূপণ করিতে না পারিয়া বহর হইতে দূরে পড়িয়াছিল। এক্ষণে কোন্ দিকে কোথায় যাইতেছে, তাহার কিছুই নিশ্চয়তা ছিল না। নৌকারোহিগণ অনেকেই নিদ্রা যাইতেছিলেন। একজন প্রাচীন এবং একজন যুবা পুরুষ, এই দুই জন মাত্র জাগ্রত অবস্থায় ছিলেন। প্রাচীন যুবকের সহিত কথোপকথন করিতেছিলেন। বারেক কথাবার্তা স্থগিত করিয়া বৃদ্ধ
নাবিকদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মাঝি, আজ আর কত দূর যেতে পারবি?” মাঝি কিছু ইতস্ততঃ করিয়া বলিল, “বলিতে পারিলাম না।”
বৃদ্ধ ক্রুদ্ধ হইয়া মাঝিকে তিরস্কার করিতে লাগিলেন। যুবক কহিলেন, “মহাশয়, যাহা জগদীশ্বরের হাত, তাহা পণ্ডিতে বলিতে পারে না ও মূর্খ কি প্রকারে বলিবে? আপনি ব্যস্ত হইবেন না।”
বৃদ্ধ উগ্রভাবে কহিলেন, “ব্যস্ত হব না? বল কি, বেটারা বিশ পঁচিশ বিঘার ধান কাটিয়া লইয়া গেল, ছেলেপিলে সম্বৎসর খাবে কি?”
এ সংবাদ তিনি সাগরে উপনীত হইলে পরে পশ্চাদাগত অন্য যাত্রীর মুখে পাইয়াছিলেন। যুবা কহিলেন, “আমি ত পূর্ব্বেই বলিয়াছিলাম, মহাশয়ের বাটীতে অভিভাবক আর কেহ নাই মহাশয়ের আসা ভাল হয় নাই।”
প্রাচীন পূর্ব্ববৎ উগ্রভাবে কহিলেন, “আসব না? তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে। এখন পরকালের কর্ম করিব না ত কবে করিব?”
যুবা কহিলেন, “যদি শাস্ত্র বুঝিয়া থাকি, তবে তীর্থদর্শনে যেরূপ পরকালের কর্ম হয়, বাটী বসিয়াও সেরূপ হইতে পারে।”
বৃদ্ধ কহিলেন, “তবে তুমি এলে কেন?”
যুবা উত্তর করিলেন, “আমি ত আগেই বলিয়াছি যে, সমুদ্র দেখিব বড় সাধ ছিল, সেই জন্যই আসিয়াছি। পরে অপেক্ষাকৃত মৃদু স্বরে কহিতে লাগিলেন, ‘আগ্রা কি দেখিলাম। জন্মজন্মান্তরেও ভুলিব না।”
“দুরাদয়শ্চক্রনিভস্য তন্বী তমালতালীবনরাজিনীলা। আভাতি বেলা লবণাম্বুরাশেদ্ধারানিবন্ধের কলঙ্করেখা।”
বৃদ্ধের শ্রুতি কবিতার প্রতি ছিল না। নাবিকেরা পরস্পর যে কথোপকথন করিতেছিল, তাহাই একতামনা হইয়া শুনিতেছিলেন।
একজন নাবিক অপরকে কহিতেছিল, “ও ভাই- এত বড় কাজটা খারাবি হলো- এখন কি বার-দরিয়ায় পড়লেম কি কোন দেশে এলেম, তা যে বুঝিতে পারি না।”
বক্তার স্বর অত্যন্ত ভয়কাতর। বৃদ্ধ বুঝিলেন যে, কোন বিপদ আশঙ্কার কারণ উপস্থিত হইয়াছে। সশঙ্কচিত্তে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মাঝি কি হয়েছে?” মাঝি উত্তর করিল না। কিন্তু যুবক উত্তরের প্রতীক্ষা না করিয়া বাহিরে আসিলেন। বাহিরে আসিয়া দেখিলেন যে, প্রায় প্রভাত হইয়াছে। চতুর্দিকে অতি গাঢ় কুাটিকায় ব্যাপ্ত হইয়াছে। আকাশ, নক্ষত্র, চন্দ্র, উপকূল, কোন কিছুই দেখা যাইতেছে না। বুঝিলেন, নাবিকদের দিভ্রম হইয়াছে। এক্ষণে কোন্ দিকে যাইতেছে, তাহার নিশ্চয়তা পাইতেছে না- পাছে বাহির সমুদ্রে পড়িয়া অকূলে মারা যায়, এই আশঙ্কায় ভীত হইয়াছে।
হিমনিবারণ জন্য সম্মুখে আবরণ দেওয়া ছিল, এজন্য নৌকার ভিতর হইতে আরোহীরা এসকল বিষয় কিছুই জানিতে পারেন নাই। কিন্তু নব্য যাত্রী অবস্থা বুঝিতে পারিয়া বৃদ্ধকে সবিশেষ কহিলেন; তখন নৌকামধ্যে মহাকোলাহল পড়িয়া গেল। যে কয়েকটি স্ত্রীলোক নৌকামধ্যে ছিল তন্মধ্যে কেহ কেহ কথার শব্দে জাগিয়াছিল, শুনিবামাত্র তাহারা আর্তনাদ
করিয়া উঠিল। প্রাচীন কহিল, “কেনারায় পড়ে কেনারায় পড়া কেনারায় পড়া”
নব্য ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, ‘কেনারা কোথা, তাহা জানিতে পারিলে এতবিপদ হইবে কেন?”