কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ ২০২৫ জানুন!

বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ জানতে হলে আগে জানতে হবে কাওমি মাদরাসা শেষ করতে কত বছর লাগে। কওমী মাদ্রাসা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ ও মূলনীতির ওপর পরিচালিত ইলমে ওহীর বিশুদ্ধ চর্চার প্রাণকেন্দ্র। নববী আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসায় কোটি কোটি শিক্ষার্থীরা ইলমে ওহীর জ্ঞান চর্চা করে। এটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে জাতীয় শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ 

কওমি মাদ্রাসার শ্রেণি বা ক্লাসসমূহকে ’জামাত’ বলা হয়। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাক্রমে বর্তমানে দুটি সিলেবাস বিদ্যমান। যথা –

১। দরসে নিজামী

২। মাদানী নেসাব

দরসে নিজামীর সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত কিতাব সমূহের দরস মূলত লম্বা সময় ধরে দেওয়া হয়। আর মাদানী নেসাবের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত কিতাব সমূহের দরস অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করা হয়।

কওমী মদ্রাসার অনেকগুলো শাখার মধ্যে প্রধান হলো কিতাব বিভাগ। এই কিতাব বিভাগের সিলেবাস বাংলাদেশের অধিকাংশ কওমী মাদ্রাসায় দশ বছরে পড়ানো হয়।দশ বছরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে দশটি ক্লাসে অধ্যায়ন করতে হয়।ক্লাসগুলো নিম্নরুপ:

১- ইবতেদায়িয়াহঃ চতুর্থ শ্রেণীর সমমান এই ক্লাস।এই ক্লাসে ভর্তি হয় ঐ সমস্ত ছাত্ররা যারা হিফজ শেষ করে কওমী নেসাবে পড়তে আগ্রহী হয়।এবং, বাংলা,ইংরেজী,গণিত ও উর্দূ একেবারেই পারেনা( অবশ্য, কওমী মাদ্রাসাতে বাংলা,ইংরেজী ও অঙ্ক খুব সীমিত পড়ানো হয়। অল্প কিছু মাদ্রাসা রয়েছে যারা ইংরেজীতে সামান্য গুরুত্ব দেয়।গণিত বিষয়টা সিলেবাসে মুটামুটি থাকলেও ফার্সী/উর্দূর ভিড়ে খুব একটা গুরুত্ব পায়না! এগুলো খুবই দুঃখজনক!)।এই জামাতে প্রাথমিক পড়াশুনা করানো হয়। এর আগেও নূরানী মাকতাবে তাদের বাংলা,গণিত ইত্যাদির অল্প পাঠ পড়ানো হয়।

বি. দ্র. উক্ত জামাতে ভর্তিচ্ছুক হাফেয ছাত্রদেরকে হিফযের উপর পরীক্ষা নেয়া হয়, আর এখানে উল্লেখিত প্রতিটি ক্লাস এক বছর মেয়াদী।

২- তাইসীর/বিশেষঃ এই ক্লাসটা পঞ্চম শ্রেণীর সমমান। হিফজ শেষ করে আসা মেধাবী ও বাংলা,ইংরেজী,গণীত ও উর্দূ সমন্ধে ধারণা রাখে এমন ছাত্ররা এবং বহিরাগত( হিফজ পড়েনি) ছাত্রদের জন্য। খুবই পড়া-লেখা হয় এই জামাতে। বিশেষে যারা পড়ে তাদের প্রথম বছর বা ‘ইবতেদায়ি আওয়াল’ পড়তে হয়না।এবং এতে পঞ্চম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষাও রয়েছে।

আপনি হয়ত অবগত আছেন যে, কওমী মাদ্রাসা সমূহের দাওরায়ে হাদিস ব্যতিত বাকী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্যে ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ অনেক আগে থেকেই কাজ করে যাচ্ছে।পরীক্ষার ফলাফলগুলো তাদের ওয়েব সাইটে সংরক্ষিত থাকে।

৩- মিজানঃ ষষ্ঠ শ্রেণীর সমমান এই ক্লাস। এই ক্লাসে তাইসীর বা বিশেষ পড়ুয়া ছাত্ররা এ জামাতে ভর্তি হয়। এই ক্লাসে আরবীর শুরু হয়।বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয় আরবীর ব্যপারে।এই জামাতে বেফাকের পরীক্ষা নেই।

তবে, অবহেলা করা হয়না।

৪- নাহবেমীরঃ সপ্তম শ্রেণীর সমমান এই ক্নাস।এই ক্লাসে মিজান পড়ে ছাত্ররা ভর্তি হয়। বেফাকের পরীক্ষা নেয়া হয় এই জামাতে। আরবী ব্যকরণ, উর্দূ, ফার্সী, সামান্য বাংলা,ইংরেজী ও অংক রয়েছে এর সিলেবাসে।

৫- হেদায়েতুন্নাহুঃ স্কুল ধারার সাথে সমানভাবে তুলনা করা চলেনা এই জামাত থেকে উপরে পর্যন্ত। কারণ হলো, এসমস্ত ক্লাসের ছাত্রদের প্রচুর পরিমানে অধ্যায়ন করতে হয়।সব মিলিয়ে অনেক লিখতে হয়।মোট কথা হলো: স্কুলের ছাত্ররা যেখানে ৩ ঘন্টা পড়তে হয় সেখানে এদের ৬ ঘন্টা পড়েও বাকী থাকে। সব শিখতে পারেনা। মুখস্তের অনেকগুলো বিষয় থাকায় শ্রম ব্যায় করতে হয় প্রচুর।এর পরে যদি মেধা দূর্বল হয় তবে করতে হয় অনেক কষ্ট!

বি. দ্র. এই জামাত থেকে কুরআনের তরজমা করা শুরু হয়, বোর্ড পরীক্ষা নেই এই জামাতে।

৬- কাফিয়াঃ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি ক্লাস। কুরআন, হাদীস, ইসলামিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মাসআলার কিতাব এবং আরবী সাহিত্য পড়ানো হয় এতে। এই ক্লাসে বোর্ড পরীক্ষা নেই।

৭- শরহে বেকায়াঃ উচ্চপর্যায়ের একটি ক্লাস।পূর্বের সাথে খুবই কম মিল। অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দরস। কুরআনের তাফসীর, হাদিসের বিশ্লেষন, রাসুলের জীবনী, আরবী গনিত ও ইতিহাসের পাঠ পড়ানো হয়। এই জামাতের বোর্ড পরীক্ষা আছে।

৮- জালালাইনঃ দরসী যোগ্যতায় নিজেকে দক্ষ করে তুলারজন্য এটি শেষ পর্যায়ের একটি ক্লাস।পড়ানো হয় উচ্চ মানের বহু কিতাব। তাফসীরে জালালাইন,নূরুল আনওয়ার,হেদায়া ১ম ও ২য় খন্ডসহ আরো অনেক কিতাব পড়ানো হয়। এই জামাতের বেফাক/বোর্ড পরীক্ষা নেই।

৯- মেশকাতঃ এই ক্লাসের পরেই দাওরা।সুতরাং, মান নিয়ে বলার তেমন প্রয়োজন নেই।মেশকাত শরীফ,হেদায়া ৩য় ও ৪র্থ খন্ড, বায়যাবি, নূখবা, শরহে আকাইদ এবং দেওবন্দের ইতিহাসসহ আরো অনেক কিতাব রয়েছে সিলেবাসে। এই জামাতের বোর্ড পরীক্ষা আছে।বিভিন্ন মাদ্রাসাতে মেশকাতের বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল ব্যতিত ভর্তি নেয়া হয়না।

১০- দাওরাঃ দাওরাকে কিছুদিন পূর্বে মাস্টার্সের মান দেয়া হয়েছে(যদিও এ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন/মত রয়েছে, তবুও সরকার তো নিশ্চয় চিন্তা করেই দিয়েছে!) কওমী মাদ্রাসার সিলেবাসের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ও মাওলানা লাইনের সর্বশেষ ক্লাস এটা।বুখারী, তিরমিযী,নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ শরীফের মতো বহু কিতাব দাওরার সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

আরও পড়ুন  সাদ সাহেবের ভ্রান্ত আকিদা ও ভুল ধারণা

দরসে নিজামী ক্লাসের নাম সমূহ 

ইবতেদায়িয়্যাহ
তাইসীর জামাত / বিশেষ জামাত
মিজান জামাত
নাহবেমীর জামাত
হেদায়েতুন নাহু জামাত
কাফিয়া জামাত
শরহে জামী জামাত
জামাতে শরহে বেকায়া
জালালাইন জামাত
মেশকাত জামাত
দারুল হাদিস (মাস্টার্স ডিগ্রি)
ইফতা (ফতোয়া বিভাগ)

মাদানী নেসাবের ক্লাসের নাম সমূহ

মাদানী নেসাব মূলত দীর্ঘমেয়াদী ৭ বছরের পরিপূর্ণ কোর্স। যেখানে আলাদাভাবে জামাত বা শ্রেণি ধরা হয় না, বরং এখানে শিক্ষার্থীদেরকে বর্ষ হিসেব করতে হয়।

প্রথম বর্ষ
দ্বিতীয় বর্ষ
তৃতীয় বর্ষ
চতুর্থ বর্ষ
পঞ্চম বর্ষ
ষষ্ঠ বর্ষ
সপ্তম বর্ষ (দাওরা হাদিস)
অষ্টম বর্ষ (ইসলামিক উচ্চতর আইন বিভাগ)

3 Comments
  1. Reply
    সাইফুল ইসলাম February 8, 2025 at 11:48 PM

    আসসালামু আলাইকুম

  2. Reply
    সাদ সাহেবের ভ্রান্ত আকিদা ও ভুল ধারণা - Amar Sikkha March 31, 2025 at 10:31 AM

    […] কাওমি মাদরাসা বন্ধ করার অপচেষ্টা […]

Leave a reply

Amar Sikkha
Logo